উখিয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধি::
কক্সবাজারের টেকনাফে বন পাহারা দিতে গিয়ে অপহৃত তিন বন কর্মীকে ৭২ ঘন্টার পর গহীন পাহাড় থেকে স্থানীয় লোকজন ও বন বিভাগের সদস্যদের সহযোগীতায় পুলিশ তাদের জীবিত উদ্ধার করেন।এ সময় দেশীয় তৈরি একনলা লম্বা ২টি বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার সহ অপহরণকারী দলের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন-মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া বাসিন্দা মো. ফয়সাল (৩০)।
উদ্ধারকৃত ভিকটিমরা হলেন-টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মোহাম্মদ শাকের (২৪),মৃত আবদুল শুক্কুরের ছেলে আব্দুর রহিম (৩৭) ও মৃত বকসু মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান (৩২)।
উখিয়া- টেকনাফের(সার্কেল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল সোমবার ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি বলেন,গত শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর জুমার দিন তিন বন কর্মী মো. আব্দুর রহমান(৩৭) মো. শাকের আলী(২৪) ও মো. আব্দুর রহিম (৪০) দমদমিয়া নেচার্র পার্ক সংলগ্ন পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করছিল,হঠাৎ এমন সময় ১০-১৫ জনের একটি ডাকাতদল তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যায়।এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।অপহরণের পর থেকে আমরা একাধিকবার পাহাড়ে ভেতর অভিযান পরিচালনা করে আসছিলাম।অভিযান চলাকালীন সোমবার দুপুর ৩টার দিকে গহীন পাহাড়ে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌছি তখন ডাকাতদল পুলিশের উপর গুলি বর্ষণ করেন।এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি বর্ষণ করলে, ডাকাতদল অপহৃত তিন ভিকটিমকে রেখে পালিয়ে যায়।পরে আমরা ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দু’টি একনলা দেশিয় তৈরি বন্দুক ও ৫ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্বার করি।
উদ্ধার হওয়া ভিকটিম মো. আব্দুর রহমান(৩৭) বলেন, আমরা নিয়মিত দমদমিয়া পাহাড়ে বন পাহারাদল হিসাবে দায়িত্বে পালন করে আসছি।এ সময় হঠাৎ একদল সন্ত্রাসী দল অস্ত্রের মুখে আমাদের তিনজনকে মারধর করে পাহাড়ে ভেতর নিয়ে যায়।আটকের পর মুক্তিপনের টাকার জন্য মধ্যযুগীয় কাদায় নির্যাতন চালায়।বাড়িতে কল করে প্রত্যেকজন থেকে ২০ লাখ করে ৬০ লাখ টাকা দাবি করে আসছিল।গহীন পাহাড়ে ভেতর আটক রেখে আমাদের ঠিকমত খেতে দেয়নি।দিনের-পর দিন নির্যাতনের তাপমাত্রা বাড়াতে থাকেন।পুলিশ ও স্থানীয়রা আমাদের খোঁজে পাহাড়ে আসলেও আমরা তাদের দেখলেও তখন আমরা তাদের ডাক দিতে পারি নাই।সন্ত্রাসীরা তখন আমাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখেন।তাই আমরা তাদের ডাকতে পারি নাই।আজ সোমবার পুলিশ ও স্থানীয়রা পাহাড়ে চারপাশ ঘিরে রেখে অভিযান পরিচালনা করলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে তখন আমরা তাদের কবল থেকে উদ্ধার হতে পারছি।
টেকনাফ উপজেলা আ’লীগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল বশর বলেন,তিন বনকর্মীর অপহরণের পর থেকে তাদের পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল।তারা চিন্তায় ছিল তাদের ফেরত পাওয়া যাবে কিনা।এমন সময় দীর্ঘ ৭২ ঘন্টা বন বিভাগ, সিপিজি ও স্থানীদের সহযোগিতায় পুলিশ তাদের গহীন পাহাড় থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন,দীর্ঘ ৭২ ঘন্টা অভিযানের পর অপহৃত তিন বনকর্মীকে গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।এ সময় অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করা হয়।
অভিযান পরিচালনা কালে ডাকাতের আস্তানা থেকে দুটি দেশীয় তৈরি একনলা লম্বা বন্দুক উদ্ধার করা
হয়।এবং উদ্ধার হওয়া ভিকটিমদের আদালতের মাধ্যমে জবানবন্দি নিয়ে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে ওসি জানায়।
এরআগে গত শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ দমদমিয়া নের্চার পার্ক সংলগ্ন পাহাড়ে তিন বন কর্মী আব্দুর রহমান,মো. শাকের আলী ও আব্দুর রহিম তারা অপহরণের শিকার হয়েছিল।এরপর থেকে অপহরণ কারীরা তাদের পরিবার থেকে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করছিল।
উল্লেখ্য,টেকনাফ উপজেলায় এ পর্যন্ত শতাধিক অপহরণের ঘটনায় দেড় শতাধিক লোক অপহরণকারীর কবলে পড়েছেন।যারা ফেরত আসতে পারছেন তারা প্রত্যেকে মুক্তিপন দিয়েছেন।এবং মুক্তিপন দিতে না পেরে এক টমটম (ইজিবাইক)চালক সহ ৬ জন খুন হয়েছেন।এবং সবর্শেষ অপহৃত তিন বন কর্মী অপহরণের ৩দিন পর সোমবার তাদের গহীন পাহাড় ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত